বাক্য ও বচনের পার্থক্য ব্যাখ্যা কর।
অথবা,
বচন ও বচনাকারের পার্থক্য আলোচনা কর।
উত্তর: ব্যবহারিক জীবনে যার দ্বারা মনের ভাব প্রকাশ করা হয় তাকে বাক্য বলে। ব্যাকরন সম্মত এই বাক্যের সঙ্গে যুক্তিবিজ্ঞান সম্মত বচন সম্পূর্নরুপে এক নয়, উহাদের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। যে পার্থক্যগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল-
১) বচন মাত্রই বাক্য কিন্তু বাক্য মাত্রই বচন নয়। কেবলমাত্র ঘোষক বাক্যই বচন হতে পারে।
২) বাক্য অস্পষ্ট বা দ্বার্থবোধক হতে পারে। কিন্তু বচন সর্বদাই স্পষ্ট ও একটিমাত্র অর্থ বহনকারী হয়।
৩) বাক্যে বচনের মত চারটি অংশ না থেকে কেবল দুটি অংশ থাকতে পারে, যথা- উদ্দেশ্য ও বিধেয়। কিন্তু বচনে সর্বদাই চারটি অংশ যথা
পরিমান (মানক), উদ্দেশ্য, সংযোজক (গুন) ও বিধেয় স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ থাকবে, কেবলমাত্র ব্যক্তি বিষয়ক বচন ছাড়া, কেননা ব্যক্তি বিষয়ক বচনের ক্ষেত্রে পরিমান বোধক শব্দ ব্যবহৃত হয় না।
৪) বাক্য অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত যে কোন কালের হতে পারে, কিন্তু বচন কেবলমাত্র বর্তমান কালের হয়।
যুক্তিবিজ্ঞানে বচনের আলোচনা প্রসঙ্গে দেখা যায় যে বচন ও বচনাকার এক নয়। এদের মধ্যে কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। পার্থক্যগুলি হল নিম্নরুপ-
১) প্রতিটি বচনে দুটি দিক থাকে একটি হল বচনের আকার বা বচনাকার এবং অপরটি হল বচনের উপাদান বা বিষয়। বচনের উপাদান বা বিষয় বহির্ভূতভাবে যে আকার বা সংকেত থাকে, তা হল বচনাকার, কিন্তু বচন হল উপাদানযুক্ত আকার। যেমন 'কোন কোন জীব হয় অসহায়'- এটি হল একটি বচন এবং 'কোন কোন S হয় P'-এটি হল একটি বচনাকার।
২) একটি বচন সত্য কিংবা মিথ্যা হতে পারে অর্থাৎ বচনের সত্যমূল্য আছে। কিন্তু বচনাকারে কোন উপাদান থাকে না বলে বচনাকার সত্য কিংবা মিথ্যা হতে পারে না, কেননা উপাদান বহির্ভূত ভাবে সংকেতের কোন বাস্তব রুপ হতে পারে না। যেমন 'সকল মানুষ হয় স্বার্থপর' এটি সত্য বা মিথ্যা হতে পারে, কিন্তু 'সকল S হয় P' এটি সত্য বা মিথ্যা হতে পারে না।
৩) একটি বচনে অর্থপূর্ন পদ থাকে, কিন্তু বচনাকারে কোন পদ থাকে না, কেবলমাত্র প্রতীক বা সংকেত থাকে।
Post a Comment